দিনকে দিন বদলে যাচ্ছে ক্রিকেট। অভিজাত টেস্ট ক্রিকেট থেকে সত্তরের দশকে জন্ম নেয় সীমিত ওভারের (ওয়ানডে) ক্রিকেটের। কালের পরিক্রমায় একদিনের ক্রিকেটকে আরও কাটছাট করে ২০০৫ সালে আবির্ভাব ঘটে তিন ঘণ্টার ক্রিকেটের। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের নাম টি-টোয়েন্টি।
বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে যেটাকে বলা হচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। এখন সেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও ছুরি চালিয়ে করা হচ্ছে আরও সংক্ষিপ্ত। যার নাম দেয়া হয়েছে টি-টেন।
আন্তর্জাতিকভাবে এখনো আইসিসি কর্তৃক স্বীকৃত না হলেও ক্রিকেটের এই স্বল্পতম ভার্ষণ টি-টেন টুর্নামেন্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেয় ইংল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ। তারই ধারাবাহিকতায় আবুধাবিতে দুই বছর আগে (২০১৭ সালে) শুরু হয় টি-টেন ক্রিকেটের প্রথম টুর্নামেন্ট। আগের দু’সংস্করণে বাংলা নাম দিয়ে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকলেও সেটিতে ছিল না কোন বাংলাদেশি প্রতিনিধি। দুবাইতে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টেন লিগের তৃতীয় আসরে খেলছে বাংলাদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি বাংলা টাইগার্স। বাংলা টাইগার্স দিয়ে আবুধাবিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়াতে চান দলের কর্মকর্তারা।
যেটির সবকিছুর দায়িত্বে রয়েছে চট্টগ্রামেরই ক্রিকেট কর্মকর্তারা। দলটির মালিকানায় রয়েছেন চট্টগ্রামের ক্রিকেট সংগঠক এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন চৌধুরী। তাঁর সাথে সহকারী মালিকানায় রয়েছেন সাবেক বিসিবি পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর। দলটির কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার চট্টগ্রামের ছেলে আফতাব আহমেদকে, তার সহযোগী কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামেরই আরেক সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার নাজিম উদ্দিনকে। দলটির ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন তামিমের অগ্রজ সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল।
আবুধাবি টি-টেন নামের এই টুর্নামেন্টের বাংলা টাইগার্সের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই প্রথম দেশের বাইরে কোন একটি দল অংশ নিচ্ছে। বাংলা টাইগার্সের মালিক একক কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয় বরং বাংলা ভাষাভাষি সকলই এই দলের স্বত্তাধিকারী- এফএমসি গ্রুপের চেয়ারম্যান ইয়াসিন চৌধুরী গতকাল চট্টগ্রাম ক্লাবে বাংলা টাইগার্সের লগো উম্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
লগো উম্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ও বিসিবি সহসভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি বাংলা টাইগার্স স্বত্তাধিকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একসময় মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের নাম শুনলেই মনে করতো ভিখারি, মিসকিনদের দেশ। সেখানে ক্রিকেট বিশ্বে সাড়া ফেলানো টি-টেন টুর্নামেন্টে একটি দলের মালিকানায় রয়েছেন বাংলাদেশেরই- বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ যারা বাংলাদেশকে অবজ্ঞার চোখে দেখে তারা এখন বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাংলা টাইগার্স টুর্নামেন্টে ভালো করে দেশের চেহারা আরও উজ্জ্বল করবে।
লগো উম্মোচন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, সাইফ পাওয়ার টেকের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এছাড়া এফএমসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাতুনে জান্নাত, সিজেকেএস এর বিভিন্ন কর্মকর্তা, স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা টাইগার্স দলটিতে সাতজন বিদেশি ক্রিকেটারের পাশাপাশি খেলবেন ছয়জন বাংলাদেশি ক্রিকেটার। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে আধিপত্য থাকবে স্থানীয় আরব-আমিরাতের। আগামি ১৬ অক্টোবর টি-টেন লিগের প্লেয়ার ড্রাফট অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৪ নভেম্বর টুর্নামেন্টটি শুরু হয়ে শেষ হবে ২৪ নভেম্বর।
প্রথম দুই আসর খেলা পাখতুন্স এবার অংশ নিচ্ছে না। দলটি বাদ পড়াতে বাংলাদেশিদের মালিকানায় অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাংলা টাইগার্স। টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরে অংশ নিবে আটটি দল। বাংলা টাইগার্সের মালিক পক্ষ আগেই জানিয়ে ছিলো, দলে কমপক্ষে পাঁচ বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে রাখবেন তারা। তবে দলটির প্রধান কোচ আফতাব আহমদ জানালেন, দলে ছয় জন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে নেওয়া হবে।